লগ ইন
 

Logo

Logo

কাম টু ওয়ার্ক সম্পর্কে

Come to Work (CTW)

কাম টু ওয়ার্ক (সিটিডাব্লিউ) এর ইতি কথা

নদীর দেশ বাংলাদেশ। পৃথিবীর মানচিত্রে ক্ষুদ্র এইদেশ, এর উত্তরে অবস্থিত দিনাজপুর জেলা। উক্ত জেলার পার্বতীপুর উপজেলার অবহেলিত একটি ইউনিয়ন যার নাম মন্মথপুর। কালের নিরব সাক্ষী হিসাবে পার্বতীপুর উপজেলার মানচিত্রে অঙ্কিত হয়ে আছে মন্মথপুর ইউনিয়নের খোড়াখাই গ্রাম। ১৯৮৩ইং সালের ৫ জানুয়ারী, বুধবার ক্ষুদ্র পরিসরে খোড়াখাই গ্রামে প্রতিষ্ঠা লাভ করে স্বেচ্ছাসেবী আজকের কাম টু ওয়ার্ক (সিডিডাব্লিউ)। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় শরনার্থী হিসাবে ভারতে আশ্রয়, স্বাধীনতা যুদ্ধ, তারপর স্বাধীনতা লাভ। স্বাধীনতা লাভের পর যখন দেশ গড়ার পালা তখন সরকারে পাশাপাশি বিভিন্ন দেশী ও বিদেশী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নানাবিধ প্রকল্পের মাধ্যমে এদেশের পিছিয়ে পড়া জনগণের জন্য ত্রান পূনর্বাসনসহ বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ শুরু করে। দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থায় বেকারত্ব, শিক্ষার অভাব, কুসংস্কার, অন্যায্যতা, নির্যাতন, কর্মহীনতা, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ইত্যাদি দিন দিন যেন চরম আকার ধারণ করছিল। বিশেষ করে ভূমিহীন, দিনমজুর, বিভিন্ন পেশাজীবি, বেকার যুবক ও মহিলা শ্রেণী নানা রূপ নির্যাতন ও অন্যায্যতার কারণে অতিষ্ট হয়ে উঠেছিল। এহেন পরিস্থিতিতে স্থানীয় ৪ জন শিক্ষিত ও সমাজ সচেতন যুবক সংগঠিত হয়ে এই সংস্থাটি গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। বস্তুত: এরা কজনেই নিকটবর্তী বিদেশী সংস্থা World Mission Prayer League (WMPL) এর project-Lamb Hospital এ কর্মরত ছিলেন। পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও বেসরকারী সংস্থার আন্দোলন (এনজিও মুভমেন্ট) এবং দেশের অভ্যন্তরে দাতা সংস্থার প্রকল্প অনুমোদন ইত্যাদি ঐ স্বেচ্ছাসেবী যুবকগণকে অনুপ্রেরণা যোগায়। যুব সমাজের বেকারত্ব নানাবিধ সমস্যা, গ্রামীণ দরিদ্র জন সাধারণের ক্রমান্বয়ে অবনতি, মহিলা ও শ্রমিক শ্রেণীর উপর নির্যাতন ইত্যাদি সচেতন যুবকদের কিছু করার জন্য দৃঢ়ভাবে তাড়না করে। ধার করা কুপি (বাতি), পঁচিশ পয়সার তৈল আর বিশ পয়সার কাগজ দিয়ে সেদিন তারা শুরু করেছিল মিটিং এবং উন্নয়ন প্রচেষ্টার পদযাত্রা। সংস্থার অস্থায়ী কার্যালয় ছিল খোড়াখাই চাকলা বাজারের পুর্ব পার্শে¦র একটি ভাঙ্গা বাড়ী। যার মাসিক ভাড়া ঠিক হয়েছিল ২৫/- টাকা মাত্র। প্রাথমিক পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবী কর্মী ও মূলধন সংগ্রহের কার্যক্রমই ছিল প্রধান। আহ্বানের তুলনায় সাড়া পাওয়া গিয়েছিল অপ্রতল এবং ধিক্কার পাওয়া গিয়াছিল ঢের। সে দিনের ধিক্কার ছিল তাদের উন্নয়ন প্রচেষ্টার পাথেয়। যারা ধিক্কার দিয়েছিল তারা শুধু ধিক্কার দিয়েই ক্ষ্যান্ত হয়নি বরং সংগঠনের এক টুকরা জমিকে কেন্দ্র করে সাজানো হয়েছিল মিথ্যা মামলা। সফল হতে পারেনি চক্রান্তকারীরা। তিনি মামলা থেকে এক সময় ঠিকই নির্দোষ প্রমাণিত হন এবং ফিরে পায় সংগঠন তার জমিটুকু।

বলা বাহুল্য স্বাধীনতা উত্তর সময়ে এনজিও বা স্বেচ্ছাসেবী বেসরকারী সংস্থা সমূহের কর্ম তৎপরতা সকলের দৃষ্টি, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোর অনুপ্রেরণা ও অর্থানুকুল্যে জেলা ও থানা পর্যায়ে বহু স্থানীয় সংগঠন গড়ে ওঠে। কাম টু ওয়ার্ক (সিটিডাব্লিউ) এ ধরণের একটি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, যা ১৯৮৪ সালে সমাজ সেবা অধিদপ্তর কর্তৃক নিবন্ধিত হয়। সংস্থার শুরুতেই অর্থাৎ ১৯৮৪ সালে একটি সুন্দর কৌশলের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করা হয়। এলাকার যুবকগণ অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে খোড়াখাই থেকে সৈয়দপুর, রাণরিবন্দর, দশমাইল হয়ে দিনাজপুর পর্যন্ত এক সাইকেল র‌্যালী আয়োজন করে। এতে প্রায় ১২,০০০/- টাকা অর্থ সাহায্য হিসাবে সংগৃহীত হয়। এই টাকা দিয়েই একখন্ড জমি ক্রয় করে তাতে স্বল্প ব্যয়ে ছোট্ট এক অফিস নির্মাণ করা হয়। অফিস ঘর নির্মাণে অর্থ প্রাপ্তিতে সহযোগিতা করেন তৎকালিন দিনাজপুর জেলা প্রশাসক এবং পরবর্তীতে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জনাব মোঃ আমিনুল ইসলাম এবং কারিতাস বাংলাদেশ এর আঞ্চলিক পরিচালক মিঃ বার্নাড কোড়াইয়া। সংস্থা তার নিজস্ব প্রচেষ্টা, স্থানীয় সহযোগিতা ও দয়া দাক্ষিণ্য দিয়ে কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু ইহা প্রয়োজনের তুলনায় আদৌ যথেষ্ট ছিল না। বাহিরের অর্থ সহযোগিতার জন্য দাতা সংস্থার প্রয়োজন অত্যন্ত জরুরী হয়ে দেখা দেয়। অতঃপর ১৯৮৫ সালে সংস্থা অক্সফ্যাম কর্তৃক প্রথম ৫০,০০০/- টাকা অনুদান অনুমোদন প্রাপ্ত হয়ে নিম্নবর্ণিত আদর্শ ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ব্যবহারিক বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করে।

অদ্যাবধি সংস্থাটি বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগী হিসাবে ভূমিকা রাখছে

প্রারম্ভিক আদর্শ উদ্দেশ্যঃ
১। গ্রাম ভিত্তিক অংশগ্রহণ মূলক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা।
২। সংগঠন বা দল তৈরী করা এবং এর সাংগঠনিক শক্তিকে অর্থনৈতিক পূনর্বাসনসহ অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজে লাগানো।
৩। ভিখারীর হাতকে কর্মীর হাতিয়ারে পরিণত করা।
৪। “যা চাই বা যা নাই” তার জন্য অপেক্ষা না করে “যা আছে” তাই নিয়ে কাজে ঝাপিয়া পড়া।
৫। প্রতি ইঞ্চি জমি ও প্রতিটি কর্মক্ষম মানুষকে উৎপাদনের কাজে লাগানো।
৬। “সমালোচনা নয়” আত্ম সমালোচনা” এবং “মুখে কথা নয়, হাতে কথা কও” এই পদ্ধতি কর্যক্ষেত্রে প্রয়োগ করা।

সংস্থার বর্তমান লক্ষ্যঃ
* অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ায় অভিষ্ট জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক টেকসই উন্নয়ন।

সংস্থার বর্তমান উদ্দেশ্যঃ

* সাংগঠনিক কাঠামো উন্নয়ন ও নেতৃত্ব বিকাশ;    

* কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আয়বৃদ্ধির মাধ্যমে স্বাবলম্বিতা অর্জন;

* সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা ত্বরান্বিতকরণ ও মান বৃদ্ধি;       

* পরিকল্পিত পরিবার ও সুস্থ জীবন গঠনে সহায়তা;

* পরিবেশ বান্ধব বনায়ন ও কৃষি খামার গড়ে তোলা;        

* নারী-শিশু অধিকার সুরক্ষা ও জেন্ডার সমতা সৃষ্টি;

* দূর্যোগ মোকাবেলা ও ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা;     

* প্রতিবন্ধীদের সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করা।

সংস্থার মূল্যাবোধঃ

* লক্ষ্যভুক্ত জনগোষ্ঠীর প্রতি আত্মবিশ্বাসী;

* সু-সংগঠিত গণতান্ত্রিক পদ্ধতি;

* নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য মানবিক আচরণ;

* অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতিতে ক্ষমতায়ন;

* স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা;

* বিশ্বাসের ভিত্তিতে মতামত;

* বৈষম্যের বিরুদ্ধে কাজ;

* স্বাধীনতার জন্য বাস্তবধর্মী সেবা;

* দুঃস্থদের প্রতি মমত্ববোধ সৃষ্টি।